প্রাথমিক সমাপনীতে এবারও পরীক্ষার্থী কমেছে

সারা দেশে পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া ৩০ লাখ
৯৬ হাজার ৭৫ জন শিক্ষার্থী এবার
প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা
সমাপনীতে বসছে; পরীক্ষার্থীর সংখ্যা
এবার কমেছে প্রায় ৪ শতাংশ।
পঞ্চমের সমাপনীতে টানা দ্বিতীয় বছরের
মত পরীক্ষার্থী কমল, যাকে ‘ভুয়া
শিক্ষার্থীর তালিকা তৈরি বন্ধ’ হওয়ার
ফল হিসেবে দেখছেন প্রাথমিক ও
গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান
ফিজার।
বুধবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে
তিনি বলেন, আগে যখন শতভাগ শিক্ষার্থী
উপবৃত্তির পেত না, তখন ভুয়া তালিকা
তৈরি করে সরকারের কাছ থেকে
অতিরিক্ত টাকা নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ সব
শিক্ষার্থীকে বৃত্তি পাইয়ে দেওয়ার
ব্যবস্থা করত।
“এখন আমরা শহরে, বন্দরে, নগরে, মহানগরে
শতভাগ বৃত্তি দিচ্ছি। কোনো জায়গা
উপবৃত্তির বাইরে নেই। কম্পিউটারাইজড
পদ্ধতিতে, অনলাইন ব্যাংকিংয়ের
মাধ্যমে এখন যে কাজগুলো করা হচ্ছে, তার
ফলে যেসজ জায়গায় ল্যাপসগুলো ছিল,
সেটা ক্লিয়ার করতে পেরেছি।”
তবে টানা দুই বছর কেন পরীক্ষার্থী কমল
তা ‘গবেষণার’ বিষয় বলে মন্তব্য করেন
মন্ত্রী।
“আমি পরিসংখ্যানবিদ না। তবে ক্লাসে
যা থাকবে তার থেকে বেশি করে
দেখানোর কোনো সুযোগ নাই।”
দেশের সাত হাজার ২৬৭টি এবং বিদেশের
১২টি কেন্দ্রে আগামী ১৯ নভেম্বর থেকে
শুরু হবে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের এ সমাপনী
পরীক্ষা, চলবে ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত।
এবার ২৮ লাখ চার হাজার ৫০৯ জন ক্ষুদে
শিক্ষার্থী প্রাথমিক সমাপনী এবং দুই
লাখ ৯১ হাজার ৫৬৬ জন ইবতেদায়ী
পরীক্ষা দেবে।
এ পরীক্ষায় গত বছর মোট ৩২ লাখ ৩০
হাজার ২৮৮ জন অংশ নিয়েছিল। সে
হিসেবে এবার পরীক্ষার্থী কমেছে এক
লাখ ৩৪ হাজার ২১৩ জন। ২০১৫ সালে ৩২
লাখ ৫৪ হাজার ৫১৪ জন পঞ্চমের
সমাপনীতে বসেছিল।
সংবাদ সম্মেলনে ফিজার বলেন, “এবার
ছাত্রদের থেকে এক লাখ ৮৯ হাজার ৮০১
জন বেশি ছাত্রী সমাপনীতে অংশ নেবে।
এটা আশাব্যঞ্জক যে মেয়েরা প্রতিটি
ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে।”
প্রাথমিক সমাপনীতে এবার দুই হাজার
৯৫৩ জন এবং ইবতেদায়ীতে ৩৭৯ জন
‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন’ পরীক্ষার্থী
অংশ নেবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এই
শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময়
দেওয়া হবে।
পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে শেষ করতে যাবতীয়
প্রস্তুতি নেওয়ার তথ্য জানিয়ে মন্ত্রী
বলেন, “প্রশ্নপত্র বিশেষ নিরাপত্তায়
জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া
হয়েছে। দুর্গম এলাকার ২০৪টি কেন্দ্রে
প্রশ্ন পাঠানো হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থায়।
পরীক্ষার দিন উপজেলা থেকে কেন্দ্র
সচিবের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।”
পরীক্ষার দায়িত্ব পালনে অবহেলা বা
অনিয়মের ক্ষেত্রে ‘জিরো টলারেন্স’
নীতি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান
মন্ত্রী।
তিনি বলেন, “পরীক্ষাকেন্দ্রে মোবাইল
ব্যবহার করা যাবে না।… যত প্রকার ছিদ্র
এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়েছে, যে
ছিদ্রগুলো দিয়ে পানি আসতে পারে,
সবটাই বন্ধ করার আমরা চেষ্টা করছি।”
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের ফল
পরিবর্তনের ঘটনা ঘটেছে স্বীকার করে
ফিজার বলেন, “শ্রেণি নির্বিশেষে কেউ
দাবি করতে পারি না যে শতভাগ নিশ্চিত
পদ্ধতিতে আমরা কাজ করছি। আমরা
পরীক্ষামূলকভাবে এগিয়ে যাচ্ছি।”
তিনি বলেন, “যুগে যুগে কালে কালে এ রকম
আরও বেশি হয়ত ছিল, তখন হয়ত এমন
মিডিয়ার ইয়ে ছিল না। এখন মানুষের
সামনে এই কথাগুলো আসছে, যেখানেই
যেটা আমরা পাচ্ছি এটার ব্যাপারে শুধু
এটুকুই বলতে পারি, এ ধরনের কোনো
অব্যবস্থা বা কোনো অনিয়ম কোনো
জায়গায় কোনো ব্যক্তিবিশেষ বা ক্ষুদ্র
গোষ্ঠী করতে পারেন, কিন্তু রাষ্ট্রীয়
কোনো পৃষ্ঠপোষকতায় এ ধরনের কোনো
ঘটনা ঘটছে না।”
ফল পরিবর্তনের দায়ে রাজশাহীতে একজন
জেলা ও একজন থানা শিক্ষা কর্মকর্তাকে
কারাগারে পাঠানোর তথ্য জানিয়ে
মন্ত্রী বলেন, “আমরা এর মাধ্যমে বার্তা
দিয়েছি, কেউ যদি এ ধরনের কাজে
উদ্যোগী হয়, তাহলে কী হতে পারে।”
পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য ২০০৯
সাল থেকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা
শুরু হয়। আর ইবতেদায়ীতে এই পরীক্ষা
হচ্ছে ২০১০ সাল থেকে।
প্রথম দুই বছর বিভাগভিত্তিক ফল দেওয়া
হলেও ২০১১ সাল থেকে গ্রেডিং পদ্ধতিতে
ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের সমাপনীর ফল দেওয়া
হচ্ছে।
আগে এই পরীক্ষার সময় দুই ঘণ্টা থাকলেও
২০১৩ সাল থেকে পরীক্ষার সময় আধ ঘণ্টা
বাড়িয়ে আড়াই ঘণ্টা করা হয়।
প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে গত বছর থেকে দেশের
৬৪ জেলাকে বিশেষ আটটি অঞ্চলে ভাগ
করে আট সেট প্রশ্ন ছাপিয়ে প্রাথমিক ও
ইবেতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী নিচ্ছে
সরকার।
অন্যদের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব
মোহাম্মদ আসিফ-উজ-জামান, প্রাথমিক
শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো.
আবু হেনা মোস্তফা কামাল এবং
গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন
কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত
ছিলেন।

Share on Google Plus

About uthuranews24.com

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.

0 comments:

Post a Comment